আজ মঙ্গলবার, ১৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন জঙ্গিতে শামীম ওসমান সাগর-রুনীতে আইভী

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ মার্ডার সংঘটিত হওয়ার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর হোসেন আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে ৭ মার্ডারের প্রধান আসামী নূর হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ হয়। উক্ত আলাপচারিতার অডিও রেকর্ড জনসম্মুখে চলে আসার পর ওই হত্যাকান্ডের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জবাসী সহ সমগ্র দেশ বাসির কাছে পরিস্কার হয়ে যায়। আলাপচারিতার অডিওটি প্রকাশ পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ সহ সমগ্র বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। কিছুদিন পর অজ্ঞাত কারণ বশত উক্ত আলাপচারিতার বিষয়টি সহ শামীম ওসমানের বিষয়ে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তা থমকে যায়।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উটপটাং মন্তব্য প্রদান করে প্রায়ই আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে থাকেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং এর পূর্বের বেশ কিছু সভা-সমাবেশে দেশে জঙ্গিবাদের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি হলি আর্টিজেন হামলার পরে বলেছিলেন, তিনি অনেক আগে থেকেই জানতেন দেশে এমন কিছু একটা ঘটবে।

অপর দিকে গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ এনে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর যে স্মারকলিপিটি জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে সেই স্মারকলিপিটির কিছু অসংগতি নিয়ে ‘আইভীকে নিয়ে নতুন খেলা’ শিরোনামে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ ছিল, বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) মেয়রকে হেয় করার উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারক লিপি দেয়া হয়েছে। মেয়রের ৬ মার্চের একটি বক্তব্যের আংশিক কিছু অংশ তুলে ধরে নানা অভিযোগ করা হয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বেশ অসচেতনভাবে স্মারকলিপিটি তৈরি করে রেখেছিলো ১৯ ফেব্রুয়ারী। স্মারকলিপির প্রথম পাতায়ই ১৯ ফেব্রুয়ারী তারিখটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর দিকে যেই সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়েছে সেই সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠনটি নিয়ে বিশিষ্টজনরা বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে যারা দাঁড়িয়েছেন তাঁদেরকে চিনিনা, এদেরকে চিনতেছিনা। এই ব্যানারে কুতুবউদ্দিন আকসির পর্যন্ত জানি। নব্য সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যাপারে জানিনা।

উল্লেখিত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারীরা আলোচিত সাগর-রুণী ও তনু হত্যাকান্ড নিয়ে মেয়র আইভীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবী তুলেছেন। সাগর-রুনী ও তনু হত্যাকান্ড নিয়ে আইভীকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে নাগরিক সমাজ ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। আইভীকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে একাধিক সচেতন নাগরিকের সাথে কথা হলে তারা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এই পরিবারের বিষয়ে কথা বলতে ভয় হয়! তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলা নিজেদের কপালে শনি ডেকে আনা একই কথা। তবে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি, যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জঙ্গি হামলার বিষয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেই জঙ্গি হামলার বিষয়ে তাঁকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না? একজন চিহ্নিত অপরাধি আলোচিত ৭ মার্ডারের প্রধান আসামীকে তিনি শামীম ওসমান যেভাবে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন যে, আমি জানি তুমি অপরাধ করো নি! দেশের বিচার ব্যবস্থার উর্ধ্বে উঠে কি করে একজন খুনিকে সার্টিফিকেট দিলেন, এই বিষয়ে তাঁকে (শামীম ওসমান) কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না? তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না? ঐ সময় তাঁর স্থানে যদি নূর হোসেনের সাথে কোন সাধারণ নাগরিক একই সুরে কথা বলতেন তাঁর কি অবস্থা হতো কেউকি একটি বারের জন্য চিন্তা করে দেখেছেন? তিনি প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের লোক এবং একজন সংসদ সদস্য বলে তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শামীম ওসমানের স্থানে যদি অন্য কেউ থাকতো এতোদিনে হয়তো তাঁকে ফাঁসি কিংবা আজীবন কারাবাসের শাস্তি প্রদান করা হতো। সেই দিন এই কথিত সচেতন নাগরিক সমাজ কোথায় ছিলো। কেন তাঁরা সেইদিন কোন স্মারকলিপি প্রদান করলেন না?

মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যাকান্ড নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী সাধারন নাগরিকদের সাথে কথা হলে তাঁরা ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার হওয়া অত্যান্ত জরুরী। একটি প্রতিভাবান ছেলেকে যেভাবে খুনিরা হত্যা করলো সেই খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন ছিলো। তবে নরায়ণগঞ্জে কি শুধু ত্বকী নিহত হয়েছে? ত্বকী নিহত হওয়ার পর শুধু কি ত্বকীর মায়ের বুক খালি হয়েছে? প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে খুন, গুম, ধর্ষণ ও বলাৎকারের মত জঘন্য ঘটনা ঘটছে। এ সকল খুন, গুম, ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিষয়ে তাঁদের ততোটা প্রতিবাদী হতে দেখা যায় না। ত্বকীর মৃত্যু বার্ষিকী, জন্ম বার্ষিকীর কিংবা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের মাসিক সভার দিনগুলোতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ত্বকী হত্যান্ডের বিষয়ের সাথে নামকাওয়াস্তে নগরীর অন্যান্য হত্যাকান্ডের বিষয়ে একটুআকটু বলেন তবে নিহত ত্বকীর হত্যাকারীদের বিচারের জন্য তারা যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, অন্য কোন হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে তাদের ততোটা সরব উপস্থিতি কিংবা প্রতিবাদমুখর দেখা যায় না। নিহত ত্বকী হত্যাকান্ডের সাথে একটি পরিবারের সম্পৃক্ত থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠনগুলো বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করছে।

এই বিষয়ে ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা শুধু ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে প্রতিবাদ করি না। নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য হত্যাকান্ডের বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করি। ত্বকী হত্যাকন্ডের সাথে একটি পরিবারের সন্দেহজনক সম্পৃক্ত থাকার কারনে মেয়র আইভী সহ না’গঞ্জের অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ত্বকী মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি রফিউর রাব্বি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অপরাগত প্রকাশ করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, মেয়র আইভী ও ৭ খুনের বিষয়টি আলাদা। ৬২৭ ধারায় পূর্ণাঙ্গবালা জবানবন্দী দিয়েছিলেন যে, শামীম ওসমান ৭ খুনের ঘটনার সাথে জড়িত আছে। তারপরও আদালত কিংবা প্রশাসন তাঁকে (শামীম ওসমান) আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। সেলিনা হায়াৎ প্রসঙ্গে শহরে যে নোংরা রাজনীতি চলছে। তিনি যে সন্ত্রাস ও হত্যাকান্ডের বিষয়ে প্রতিবাদ করছেন এতে বাহ্বা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে একটি পক্ষ যে অভিযোগ তুলছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শামীম ওসমান তার নিজ বাসভবনে তরিঘরি করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেছিলেন যে সেনাবাহিনী নিয়ে খেলা হচ্ছে এবং নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি হামলা হতে পারে। ইতিপূর্বেও তিনি এমন অনেক বক্তব্য প্রদান করেছেন। তখন তাঁকে (শামীম ওসমান) আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু কথা হলো পুরনো কথাগুলো টেনে এনে এখন সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জড়ানো সঠিক বলে আমার কাছে মনে হয়না।
শুধু ওসমান পরিবারের পিছে ছুটলেই হবেনা সেই সাথে জেলার সকল গুম, হত্যাকান্ডের বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন মেয়রের। সেই সাথে যদি মেয়রকে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হয় তাহলে সবার পূর্বে নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সাংসদ শামীম ওসমানকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিলো। এমনটাই মনে করেন জেলার সচেতন মহল।